ইসরায়েলি মিত্র দেশের গণমাধ্যম বিবিসি হামাসকে ‘টেররিস্ট’ বলছে না কেন

চলমান ফিলিস্তিনি-ইসরায়েল সংঘাতের মূলে রয়েছে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস। এই সংগঠনকে অন্যান্য পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ‘টেররিস্ট’ বলে প্রচার করলেও তা করছে না ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

ইসরায়েলের ঘনিষ্ট মিত্র যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে বিবিসিতে হামাসকে ‘টেররিস্ট’ হিসেবে উল্লেখ না করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী। কঠোর ভাষায় সমালোচনার পাশাপাশি বিবিসির নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

এখানেই শেষ না বিবিসির নীতি সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি এবং সংস্কৃতিমন্ত্রী লুসি ফ্রেজার। তাদের নীতি অনেকেই লজ্জার বলেও দাবি করেছেন।

এসব সমালোচনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন সংবাদমাধ্যমটি। বিবিসির ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স এডিটর জন সিম্পসন তাদের অনলাইনে একটি লেখায় বলেছেন, নীতিগত কারণেই বিবিসি হামাসকে ‘টেররিস্ট’ বলছে না।

জন সিম্পসন বলেন, কাউকে টেররিস্ট বলার অর্থ হচ্ছে আপনি পক্ষ নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রী, কলামিস্ট, সাধারণ মানুষসহ অনেকের জিজ্ঞাসা বিবিসি কেন হামাসকে টেররিস্ট বলছে না। এর উত্তর বিবিসির প্রতিষ্ঠাকালীন নীতিতেই রয়েছে।

সংবাদমাধ্যমের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, কেউ না বললে বিবিসির সাংবাদিকেরা নিজেরা কখনোই এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন না, এটি তাদের দীর্ঘদিনের চর্চা।

বিবিসির মুখপাত্র বলেন, আমরা সবসময় আমাদের ভাষার ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখি। যে কেউ আমাদের প্রতিবেদন শুনলে বা দেখলে সেখানে তারা টেররিস্ট শব্দটি বহুবার শুনতে পাবেন। কারা শব্দটি বলেছেন তাও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় প্রতিবেদনে।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রতিবেদনে নিয়মিত উল্লেখ করি যে ব্রিটিশ ও অন্যান্য সরকার হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিন্দা করেছে, আর এটি তাদের কাজ। আমরা অতিথিদের সাক্ষাৎকারও চালাই যেখানে তারা হামাসকে সন্ত্রাসী হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি লিখেছেন, এটি এমন এক পন্থা যা কয়েক দশক ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে এবং অন্যান্য গণমাধ্যমও সেটি করে থাকে। বিবিসি একটি স্বাধীন সম্প্রচারমাধ্যম। যার কাজ হচ্ছে যা কিছু ঘটছে তা সঠিকভাবে তুলে ধরা যাতে আমাদের দর্শক-শ্রোতারা ঘটনা সম্পর্কে জেনে তা সম্পর্কে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

এর মূল বিষয় হচ্ছে আমাদের অডিয়েন্সকে ঘটনাগুলো তথ্য দিয়ে জানানো যাতে তারা তাদের নিজেদের মত তৈরি করে নিতে পারেন। কাউকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া আমাদের কাজ না।

এ বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে অভিজ্ঞ বিবিসির এই জেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, ৫০ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট করছি। ইসরায়েলে এ ধরনের হামলার পরিণতি আমি দেখেছি এবং লেবানন এবং গাজার বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিণতিও আমি নিজে দেখেছি। আপনি আপনার মন থেকে এ ধরনের ভয়াবহ জিনিস কোনোদিন মুছে ফেলতে পারবেন না।

কিন্তু তার মানে এই নয় যে সংগঠনের সমর্থকেরা এগুলো চালিয়েছে তাদেরকে টেররিস্ট সংগঠন বলা আমাদের শুরু করা উচিত। কারণ তার অর্থ হবে বস্তুনিষ্ঠ থাকার দায়িত্ব ত্যাগ করা।

তিনি বলেন, বিবিসি সব সময়ই এমন ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিবিসির প্রতিবেদকদের স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছিল নাৎসিদের মন্দ বা খারাপ না বলতে।

আমরা কোনো পক্ষ নিই না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো ‘মন্দ’ বা ‘কাপুরুষতা’র মতো চাপিয়ে দেওয়া শব্দ ব্যবহার করি না। আমরা ‘টেররিস্ট’দের কথা বলি না। শুধু আমরাই নই, বিশ্বজুড়ে নন্দিত আরও অনেক গণমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থাও এই নীতি মেনে চলে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //